এপিটাফ - হুমায়ূন আহমেদ | Epitaph - Humayun Ahmed || Review And Pdf

📕রিভিউ📕


বই : এপিটাফ

লেখক : হুমায়ূন আহমেদ

মূল্য : ২৫০ টাকা

প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ

প্রকাশনী : অন্যপ্রকাশ

পৃষ্টা : ১১৯


রিভিউ লেখক : Harun Ar Rashid 

Pdf : Download Link







সাজ্জাদ ও দিলশাদ দম্পত্তির একমাত্র মেয়ে নাতাশা। নাতাশা ঘুমুচ্ছে। গায়ে পাতলা একটা চাদর। কোলবালিশের উপর তার রোগা একটা হাত। নাতাশা দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। রোগের নাম মেনিনজিওমা। অসুখটা ভয়াবহ। বাংলাদেশে এর চিকিৎসা নেই। নাতাশাকে বাইরে পাঠাতে হবে। কিন্তু বাধ সাধে অর্থ।
মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্ম নেওয়া মানুষগুলোর জন্য এটি একটি মহামারি সমস্যা বটে। কিন্ত নাতাশার মা দিলশাদ দমে যাওয়ার মানুষ নন। যে করেই হোক মেয়েকে চিকিৎসার জন্য আমেরিকা পাঠাবেনই। তিনি প্রাণ পণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী একজন মহিলা। যিনি দিনরাত পাগলের মত ছুটছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। একজন মাতাল,বাউন্ডুলে স্বামীর অপেক্ষায় তিনি থাকতে পারেন নি। মেয়েকে বাঁচাতে তাই তিনি নিজেই নেমে পড়েছেন এক অনিশ্চয়তার যুদ্ধে।
দিলশাদ প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছেন জীবনের সাথে। একমাত্র মেয়ে টিয়া পাখির জীবন বাঁচানোর যুদ্ধে। সফল হবেন কি না তিনি জানেন না। তিনি এও জানেন না এর শেষ পরিণতি কি? তবুও তিনি ছুটে বেড়াচ্ছেন দ্বিক-বিদ্বিক। টাকার জন্য। শুধু পরিচিত না, ভাসাভাসা পরিচিত জনদের কাছেও তিনি ছুটে গিয়েছেন। ছুটে গিয়েছেন বাল্যবন্ধু আনুশকার কাছে। যে কিনা বারিধারার মতো রাজকীয় জায়গায় এক রাজপ্রাসাদের বাসিন্দা। দিলশাদ একমাত্র মেয়ের কথা ভেবে নিজেকে ভিক্ষুকের মতো উপস্থাপন করেছেন বাল্যবন্ধু আনুশকার কাছে। আনুশকা সব শুনে একটা খামের ভেতর পাঁচশত টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিলেন।
কষ্টে দিলশাদের হৃদয় ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেলো। জীবনের এ কঠিন সময়ে আনুশকা তার সাথে এহেন আচরণ করতে পারে দিলশাদ তা ভেবেই পাচ্ছেন না। তবুও দমে যান নি দিলশাদ। তিনি ছুটে গেলেন বড় বোনের স্বামী ওয়াদুদুর রহমানের কাছে। বোনের সাথে দাম্পত্য কলহের জের ধরে তিনি এখন ধানমন্ডিতে আলাদা ফ্ল্যাটে থাকেন। অনেক নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে দিলশাদ অবশেষে পৌঁছালেন শ্বেতপাথরের কারুকার্যে সুশোভিত চারতলা ভবনের থ্রী-সিতে।
দিলশাদকে হাত ধরে টেনে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেন ওয়াদুদুর রহমান। তিনি অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাসলেন। দিলশাদের গালে একটা হাত রাখলেন। অন্য হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। ওয়াদুদুর রহমান নাতাশার চিকিৎসার জন্য দু লাখ টাকার চেক লিখে দিলেন। বিনিময়ে চাচ্ছেন অন্য কিছু। তিনি আলিশান বাড়ির বাথটাব উদ্বোধন করতে চান দিলশাদকে দিয়ে। দিলশাদ চোখ বন্ধ করলেন। ভাবলেন, এ কেমন নিয়তি!! আমার বিপদের দিনে চির চেনা মানুষগুলোও কেমন অচেনা-অস্বাভাবিক আচরণ করছে!
অবশেষে নাতাশাকে বিদেশ পাঠানোর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলো। নাতাশা যাবার আগে ডায়রী খুললো। চিঠি লেখলো বাবা, মা, নানু, ফুলির মা (কাজের মহিলা) কে। নাতাশার ধারণা সে আর সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেনা। তার মৃত্যুর পর যেন সবাই তার মনের অব্যক্ত কথাগুলো পড়তে পারে, তাকে মনে রাখতে পারে এ জন্যই আজকের লেখা।
আকাশভর্তি ঘন কালো মেঘ। বিজলি চমকাচ্ছে। ক্ষমতাধর মানুষের সৃষ্ট ডিসি-১০ বিকট গর্জন করে মেঘ কেটে উপরে উঠে যাচ্ছে। কত অবলীলাতেই না উড়ে যাচ্ছে নাতাশাকে বহন করা বিমানটি।
দিলশাদের চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে দিলশাত মা'র দিকে হাত বাড়িয়ে শান্ত থাকার চেষ্টা করছে। ততক্ষণে বিমান তার একমাত্র কলিজার টুকরো মেয়ে নাতাশাকে নিয়ে আকাশের সাথে মিশে গেছে। অতঃপর কি হয় নাতাশার? নাতাশা কি তার জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে পেরেছে? জয়ী হতে পেরেছে কি মা দিলশাদ? জানতে হলে পড়তে হবে এপিটাফ।
বইটিতে দিলশাদের প্রতিনিয়ত মানসিক-সামাজিক চাপের দিকগুলোও আলাদাভাবে ফুটে উঠেছে। কিভাবে তাকে ছোট হতে হয় তার কলেজের বান্ধুবীর কাছে এমনকি নিজের দুলাভাইয়ের কাছেও তা দেখানো হয়েছে। দেখানো হয়েছে একমাত্র মেয়ের জীবন বাঁচানোর তাগিদে একজন মায়ের জীবনযুদ্ধে প্রতিনিয়ত হার না মানা সংগ্রামের এক রূদ্ধশ্বাস কাহিনী। সব মিলিয়ে মধ্যবিত্তের জীবনে একটা মরণব্যাধী যে কি রকম প্রভাব ফেলতে পারে তা হুমায়ূন আহমেদ দেখিয়েছেন "এপিটাফ" বইটিতে তাঁর নিজস্ব ঢঙ্গে।


Collected : 

বইপোকাদের আড্ডাখানা (Boipokader Addakhana)

No comments

Powered by Blogger.